পথে-ঘাটে
রফিকুল বাসার
বৃহস্পতিবার। রাত পৌনে নয়টা। মালিবাগ মোড়।ফট ফট দ্রুম দ্রুম শব্দ।
বোমা ফুটল নাকি!
এক দঙ্গল মানুষের মিছিলের আওয়াজও পাওয়া গেল।
না। তবু রাস্তা ফাঁকা হলো না। ভয়ে কেউ এদিক-ওদিক দৌড়াদৌড়ি করল না। বাস থেকে কেউ লাফিয়ে পড়ল না। যে যার অবস্থানে। বরং আগ্রহী হয়ে সেই শব্দের দিকেই অনেকে পা বাড়াল। বাসের জানালা থেকে গলিয়ে দিল মাথাটা । অন্যদিন এর চেয়ে কম শব্দ হলে, কিম্বা দু-তিনজন মানুষের চিত্কার শুনলেই লেজ গুটাতো। আতঙ্কে পিছটান দিত। রাস্তায় গাড়ির চাকা বাস্ট হলেও আঁতকে উঠতে দেখা যায়। কিন্তু আজ কারো মনে শংকা নেই। বরং উত্ফুল্ল।
দাঁড়িয়ে থাকা একজন নিজে নিজেই বলে উঠল, ক্যাঁচালের মধ্যে একটা ভাল খবরই পাওয়া গেল। আনন্দ তো আমাদের নেতারা করতে দেবে না। এই সব সোনার ছেলেগুলোই আমাদের মজার খোরাক জোগায়।
মালিবাগ মোড়ে ৭০-৮০ জন বা তারও বেশি ছেলে বিশৃংখলভাবে মিছিল করতে করতে, লাফাতে লাফাতে এসে হাজির হলো। তাদের মুখে সমস্বরে একটাই কথা— বাংলাদেশ, বাংলাদেশ।
জয়ের উল্লাস তাদের মুখে। আশপাশের অনেকেই মিছিলকে স্বাগত জানাল করতালি দিয়ে।
মালিবাগ মোড়ের পশ্চিম পাশটাতে একটু ফাঁকা জায়গা। আর পূর্ব পাশটাতে টেম্পুস্ট্যান্ড। পশ্চিমে দাঁড়িয়ে খণ্ড খণ্ড জটলায় স্বস্তির নিঃশ্বাস। মিছিলের বাতাস গিয়ে লাগলো সবার মনে।
-বাংলাদেশ খুব ভাল খেলেছে। মুর্তজা যা খেলা দেখালো না।
-নতুন রুবেল ছেলেটাও একটা মাস্টার পিস হইছে।
-খেলার প্রথমে দেখেই মনে হয়েছিল আজ বাংলাদেশ জিতবেই।
-এখন সবাই মিলে ওদের অভিনন্দন জানাবে।
-এই মিলটা আলোচনার টেবিলে হলে ভাল হতো। আমরা বাঁচতাম।
-আরে বাদ দে। ওদের কথা আলোচনা করে আমাদের লাভ নেই। আমাদের পুঁজি করে ব্যবসায় করবে, কিন্তু আমাদের ভাল জিনিসটা কোন দিনই করবে না।
-এই জিতাটা অনেকটা স্বস্তি দিছে।
-মাসরাফি আর সোহাগের কাছে টেইলররা দাঁড়াতেই পারেনি।
-নিউজিল্যান্ডকে একেবারে নাকানি-চুবানি খাইয়ে দিছে।
-তামিম মমিনুল শুভ সবাই সুন্দর খেলেছে।
-এখন হাসিনা-খালেদার খেলাটা সুন্দর হলেই এই সুন্দরটা ওখানে যোগ হয়।
-তোকে নিয়ে আর পারা গেল না। সব কাজেই ওই কথা না বললে থাকতে পারিস না। আজকে এই সুন্দর একটা দিনেও ওই পচা রাজনীতির কথা না বলে থাকতে পারলি না। ওদের খেলা ওরা খেলুক, আমাদের খেলা আমরা খেলি।