রাস্তা দিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটছেন। হঠাৎ খেয়াল হলো, ফুটপাতে জমে থাকা কোনো ময়লার ওপর আপনার পা পড়েছে। কেমন লাগবে?
প্রতিদিনই আমাদের দায়িত্বহীনতায় বাড়ছে পরিবেশদূষণ। অথচ একটু সতর্ক থাকলেই আমরা চারপাশটাকে রাখতে পারি পরিষ্কার। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের অপেক্ষা না-ই বা করলাম, নিজেরা কি এগিয়ে আসতে পারি না নিজেদের চারপাশটা সুন্দর রাখতে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য চালু হয় ‘হেলদি ক্যাম্পাস’ নামের উদ্যোগ। এর মূল কথা হলো, ময়লাগুলো এমনভাবে ফেলা হোক, যাতে তা পরে রিসাইকেল করা যায়। এ জন্য ক্যাম্পাসে ময়লা ফেলার আলাদা বাক্সও রাখা হয়েছে। এর উদ্যোক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদা রশিদ বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষা করার ক্ষেত্রে আমাদের আচার-আচরণ বেশ বড় একটা ভূমিকা রাখে। সারা দিন পর কিছুটা সময়ের জন্য অন্তত ভাবতে হবে যে আজকে সারা দিন পরিবেশের জন্য কী করা হলো; কোনো কিছু ব্যবহার এতটুকু পরিবেশ নষ্ট করল কি না, আমাদের হাত দিয়ে একটা ময়লাও কোথাও পড়েছে কি না। কাছাকাছি কোথাও ময়লা ফেলার ব্যবস্থা না থাকলেও “আমি এখানে-সেখানে ময়লা ফেলব না”—এটা হতে হবে নিজের কাছেই নিজের কমিটমেন্ট। যেগুলোকে আমরা ময়লা-আবর্জনা বলি, আসলে সেগুলো তা নয়, যখন ঠিক জায়গামতো ফেলা হয় না, তখনই সেটা ময়লা-আবর্জনা হয়ে যায়। পরিবেশদূষণ এখন রীতিমতো একটা দুর্যোগ হয়ে গেছে। ভূমিকম্প ও জলোচ্ছ্বাস মোকাবিলার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিই, কারণ, এতে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। কিন্তু মানুষের বিভিন্ন আচার-আচরণ ধীরে ধীরে পরিবেশকে নষ্ট করছে। তাই একে একটা বড় দুর্যোগ হিসেবে এর প্রতিরোধ ও প্রতিকার করতে হবে।’
তাঁর মতে, ব্যক্তিগতভাবে যে কাজগুলো আমরা করতে পারি সেগুলো হলো—
নির্ধারিত স্থানে বা নির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা ফেলা।
নিজের কাছে সব সময় মাঝারি সাইজের প্যাকেট রাখা, যাতে ময়লা ফেলার নির্ধারিত জায়গা খুঁজে না পেলেও যেকোনো কিছুর খোসা বা অপ্রয়োজনীয় কাগজ যেন প্যাকেটে রাখা যায় এবং পরবর্তী সময়ে নির্ধারিত জায়গায় প্যাকেটটি ফেলে দেওয়া যায়।
রাস্তায় কোনো কিছু ফেলা থেকে সব সময় বিরত থাকতে হবে।
যেকোনো অনুষ্ঠানের আয়োজকদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, যেন পর্যাপ্ত ময়লা ফেলার ঝুড়ি সেখানে থাকে।
রাস্তার পাশে প্রাকৃতিক কাজ করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
যেকোনো জায়গায় কফ বা থুতু ফেলা যাবে না।
এমন কোনো কাজ করবেন না, যেটা উচ্চ শব্দ সৃষ্টি করে এবং আপনার আশপাশের মানুষের বিরক্তির কারণ হয়।
বাড়ির গৃহকর্মী ও শিশুদের জায়গামতো ময়লা ফেলার বিষয়টি বুঝিয়ে বলতে হবে।
আমাদের সচেতনতাই পারে এই সুন্দর পরিবেশকে রক্ষা করতে। আমরা সবাই জানি এ কথাটি, তবু মানার ক্ষেত্রে এসে আঙুল তুলে অন্যজনকে দেখিয়ে দিই, ‘সে তো মানছে না, আমি কেন মানব!’
অন্য কারও জন্যঅপেক্ষা কেন। আমি যে সচেতন নাগরিক, এই উদাহরণ তৈরি করে সবাইকে দেখিয়ে দিই না!
মারুফা ইসহাক