যে কোন ইভেন্ট বা কর্মযজ্ঞ সফল করে তুলতে হলে প্রয়োজন সঠিক পূর্বপ্রস্তুতির। প্রতিটি সফল ইভেন্টের পেছনে রয়েছে এর জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি গ্রহণ এবং সঠিক পরিকল্পনা। উৎসবের আমেজ নিয়ে আসছে কোরবানী ঈদ। স কালে নামাজ পরেই কোরবানীর জন্য প্রস্তুতি আর তারপর মাংস ভাগ-বাটোয়ারা করতে করতে সময় কিভাবে যায়, টেরই পাওয়া যায় না। এতো ঝক্কি-ঝামেলার মাঝে মেজাজ এমনিতেই বিগড়ানো থাকে, তার উপর যদি দেখা যায় যে কোন কাজই ঠিকঠাকমত হচ্ছে না তাহলে তখন মেজাজ যে কোন পর্যায়ে থাকতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়। এরকমটি ঘটলে বুঝতে হবে কোরবানী ঈদ উপলক্ষে আপনার পূর্ব প্রস্তুতি ও প্ল্যানিং এর ঘাটতি ছিল। তাই, জেনে নেয়া যাক কুরবানি ঈদ উপলক্ষে কি ধরনের প্রস্তুতি নেয়া যেতে পারেন। লিখেছেন হাসনাত পিয়াস।
ঈদের আগে
১) পশুর হাটে চুরি-ছিনতাই এবং প্রতারণা প্রায়শঃ ঘটে থাকে। তাই এ ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে চেষ্টা করুন হাটে একা না গিয়ে ২/৩ জন মিলে দল বেঁধে যাবার।
২) পশু কেনার পর হাসুলি প্রদানের রশিদ ঠিকমত বুঝে নিন ।
৩) পশু ক্রয়ের পূর্বে কোন ধরনের পশু কোরবানীর যোগ্য তা ভালোভাবে জেনে নিন। নয়তো দেখা যাবে আপনার কষ্ট করে কেনা পশুটি হয়তো কোরবানী দেওয়ার জন্য ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী হারামের তালিকাভুক্ত।
৪) খর, গাছের পাতা, ভুষি, ঘাস ইত্যাদি আগে থেকেই সংগ্রহ করে রাখুন।
৫) মাংস কাটার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী, যেমন, বিভিন্ন সাইজের ছুরি, চাপাতি, বাঁট, কাঠের গুড়ি, চট ইত্যাদি আনুসাঙ্গিক সামগ্রী সংগ্রহ করে রাখুন। ছুরি, চাপাতি এগুলো আগেই ভালো করে ধার দিয়ে রাখুন। রাজধানীর কাওরান বাজার, পোস্তগোলা, নিউ মার্কেট, গুলিস্তান, সদরঘাট, নবাবপুরসহ কমবেশি সর্বত্রই পাওয়া যাবে এই সরঞ্জাম।
৬) এ সময় কসাইদের দেখা পাওয়া যেন আকাশের চাঁদ পাবার সমতুল্য। দেখবেন অনেক আগে থেকেই সবাই কোন না কোন জায়গায় বুকিং হয়ে গিয়েছেন। তাই যত দ্রুত সম্ভব কসাই-এর সাথে কথা বলে রাখুন। পরে যেন কসাই না আসার কারণে বিপদে পড়তে না হয় সে জন্য দরকার হলে কিছু টাকা অগ্রিম দিয়ে বুকিং রাখুন।
৭) যাদের জায়গার সমস্যা রয়েছে, তাদের বেশিদিন আগে পশু ক্রয় না করাই ভালো।
৮) যে স্থানে পশু রাখবেন সেটি নিয়মিত ধুয়ে পরিষ্কার করে রাখতে হবে।
কোরবানীর সময়
১) দক্ষ এবং অভিজ্ঞ লোক দিয়ে পশু কোরবানী করানো উচিত।
পশু কেনার পর হাসুলি প্রদানের রশিদ ঠিকমত বুঝে নিন
২) কোরবানী করার সময় আশেপাশে শিশুদের না রাখাই উত্তম। কারণ কোরবানীর প্রস্তুতি এবং রক্তের কারণে শিশুদের মাঝে ভয়ের সঞ্চার করতে পারে।
৩) অনেক সময় জবাইকৃত অবস্থা থেকেই গরু উঠে ছুটাছুটি করতে পারে। তাই আশেপাশে কাউকে ভিড়তে না দিয়ে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে রাখা উচিত।
৪) চামড়া ছাড়াতে হবে খুব সাবধানে। চামড়া কেটে গেলে এর মূল্য অনেক কমে যায়।
৫) কাজ করতে করতে অনেকেই দুপুরে খাবারের সময় করতে পারে না। তাই কাজের ফাঁকে সবাই যেন খাওয়া-দাওয়া করে নিতে পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে।
কোরবানীর পর
পশু জবাই ও মাংস কাটা পরবর্তী একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হল কুরবানির বর্জ্য পরিষ্কার করা। যত্রতত্র বর্জ্য না ফেলে একটি গর্ত করে মাটিচাপা দিয়ে ফেলতে হবে। আর বেশি করে পানি দিয়ে কোরবানীর স্থান ধুয়ে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিতে হবে। আর ব্যাবহৃত সামগ্রি এন্টিসেপ্টিক দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
মাংস সংরক্ষণ
সঠিকভাবে কোরবানীর মাংস সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি যেন তা দীর্ঘদিন টাটকা থাকে।
সঠিকভাবে কোরবানীর মাংস সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি যেন তা দীর্ঘদিন টাটকা থাকে।
১) ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণের ক্ষেত্রে মাংসগুলো বড় বড় টুকরো করে রাখা উচিত।
২) পলিব্যাগ কিংবা প্লাস্টিকের ব্যাগে মুড়িয়ে মাংস ফ্রিজে রাখতে হবে। ফ্রিজের তাপমাত্রা মাইনাস বিশ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকাই উত্তম।
৩) ফ্রিজ ছাড়া মাংস সংরক্ষণ করতে হলে প্রথমেই মাংস কেটে পানিতে ধুয়ে নিন। এরপর গরম তেল ডুবানো হাড়িতে মাংস ঢেলে খুব ভালোভাবে সেদ্ধ করে নিতে হবে। এভাবে তেলে ডুবানো মাংস ১/২ দিন পর পর গরম করে করে অনেক দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
আর একটি বিষয়, অনেকেই ফ্রিজে পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে মাংস সংরক্ষণ করা নিয়ে বিপদের সম্মুখীন হন। তাই, আগেই ফ্রিজ যতোটা সম্ভব খালি করে ফেলা উচিত যেন মাংস রাখতে কোন ঝামেলা না হয়।
কোরবানীর শত ব্যস্ততার মাঝেও এই অতি সাধারণ কিছু নিয়ম হয়তো আপনার কাজের চাপকে কিছুটা হলেও কমিয়ে দিবে। সঠিক পরিকল্পনা আর প্রস্তুতি থাকলে দেখা যাবে অন্যান্যরা যখন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কাজ করেই যাচ্ছে আপনি তখন ঈদের আনন্দে শামিল হয়েছেন প্রিয়জনদের সঙ্গে।